ঠিকানা মৃত্যুর অন্তরীপে
কিশোরী সন্ধ্যার বাতাসে ভর করে মেয়েটি ছুটে চলেছে,
দিগন্তহীন সবুজ প্রান্তরে যেখানে রেললাইন বহমান।
পিছনে তাড়িয়ে বেড়ানো বিষাক্ত ফণাঅলা সর্পের মুহূমুহূ আক্রমণে,
অভিশংসক অন্তর ক্রন্দনে ভুলুন্ঠিত হৃদয় ।
জীবনযুদ্ধে আঁধারের গল্পের ন্যায় পরাজিত সৈনিকের মতো,
নিজেকে সঁপে দেয় বিষন্নতার উপত্যকায় উদ্ভ্রান্ত পথিকের হাতে।
এরইমাঝে বেদনার্ত বিউগলে নীড়ে ফেরা বিহঙ্গরা জানিয়ে দেয় ,
ঘরে থাকা অভুক্ত ভাইবোনের নৈঃশব্দে কান্নার চিত্র।
বাতাসে ভেসে আসে পঙ্গু পিতার ঈষাণ বিষাদ মুখশ্রীর নিবেদন -
" মা, আমার ঔষধ এনেছিস? "
মনে পড়ে সদ্য বিবাহিত বড় বোনের মায়াবী অধর,
যা অভিশপ্ত যৌতুকের তৈলাক্ত খুন্তির ছোঁয়ায় বীভৎস।
ঝিঁঝি পোকারা ডাকছে করুন ইপ্সিত চাওয়া নিয়ে,
ঠিক তার মায়ের মতোন - "মা তুই এসেছিস? "
না, তার আর ফেরা হবেনা মায়ের কাছে,
এগিয়ে দিতে পারবেনা তার সিক্ত মুখখানা
মায়ের অম্বর চুম্বিত ভালোবাসার জন্য।
ঐ মুখে এখন অগ্নিবর্ণ মেঘের নিকৃষ্ট কীটের নিষিদ্ধ আঁচড়।
যা সমাজপতিরা আলপনা করেছে কামুক পুষ্পরেণুর জৈবিক আক্রোশে।
জীবন সংসারের ঘানি টানতে বড় মুখ করে গিয়েছিলো,
সমাজ দেবতাদের ছায়ার পদতলে,
কিন্তু সে জানতো না দেবতাদেরও রয়েছে ক্ষুধা,
কাঁচা মাংসের সমুদ্র সঙ্গমের যুবতী শরীরের।
অসাড় নির্লিপ্ত দেহে মস্তিষ্কহীন অনুভূতির ভীড়ে,
অদূর থেকে ভেসে আসে রেলগাড়ির তরঙ্গরোহীনির বীভৎস সাইরেন।
বিক্ষিপ্ত পদচারণায় মেয়েটি ছুটে চলেছে -
সমান্তরাল রেললাইন ধরে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিষাদনীল গগনে।
এভাবেই হাজারো নারী আঁধার মৃত্তিকায় লালসার স্বীকারে নিজেদের সঁপে দেয়
সমুদ্র ফেনিল ঊর্মির ভয়াবহতা নিয়ে সমাজ মৃত্যুর অন্তরীপে।
12/6/17
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন